সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০২:০১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:: প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তার ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে ২০২৫ সাল হবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য ‘নবযাত্রার একটি বছর’।
ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে প্রধান বিচারপতি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৫ সালেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ হতে সম্পূর্ণরূপে প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে। রাষ্ট্রের একটি স্বাধীন অঙ্গ হিসেবে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষতা আনয়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। বিগত ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ওই রোডম্যাপে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অর্থপূর্ণ সংস্কার নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষিত হয়।
‘পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কাউন্সিল গঠন, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এছাড়া ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ দরখাস্ত চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্গঠিত হয়েছে এবং সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বর্তমানে পূর্ণ গতিতে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘যতদ্রুত সম্ভব বিচার বিভাগ হতে সকল প্রকার দুর্নীতি বিলোপের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীর জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক বিচারসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সেবার মানোন্নয়নে প্রধান বিচারপতি ১২ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন এবং এসব নির্দেশনার যথাসম্ভব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে মনিটরিং সভা নিয়মিতভাবে আয়োজিত হয়।’
‘সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের আদালতগুলোতে সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে একটি হেল্পলাইন ফোন নাম্বার চালু করা হয়েছে। এই হেল্পলাইনে কল করে সেবাগ্রহীতা প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন এবং যেকোনো অনিয়ম সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃকপক্ষকে অবহিত করতে পারেন। অভিযোগগুলো সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনাপূর্বক সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতি ঘোষিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি অন্যান্য পরিকল্পনাগুলোও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বিশেষ করে, ই-জুডিসিয়ারি বাস্তবায়নে প্রধান বিচারপতি বদ্ধপরিকর দেশের উচ্চ আদালত ও জেলা আদালতসমূহের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে ই-জুডিসিয়ারির আওতায় আনতে আগামীতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বিচার বিভাগে মেধার চর্চার বিকাশ বৃদ্ধিতে প্রধান বিচারপতি ফেলোশিপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০২৫ সালের প্রথম দিকেই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে মর্মে আশা করা যায়।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বিচার বিভাগ মূলত দেশের জনগণের সেবার জন্যই গঠন করা হয়েছে। তাই বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা কি এবং সেই প্রত্যাশা পূরণে বিচার বিভাগের কি করণীয় বা সেই প্রত্যাশা পূরণে বিচার বিভাগের কিরূপ সক্ষমতা অর্জন করা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের উদ্দেশ্যে ২০২৫ সালে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে অবস্থিত আদালতগুলোতে স্টেকহোল্ডার মিটিং আয়োজনের ইচ্ছা রয়েছে প্রধান বিচারপতির। প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপের বাস্তবায়নের বাস্তব রূপরেখা তৈরির মূল ভিত্তি হিসেবে স্টেকহোল্ডার মিটিংসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ঘোষিত রোডম্যাপের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচারসেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
‘এরই অংশ হিসেবে আগামী ২ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানি সংক্রান্ত একটি বেঞ্চে সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়ন ও উদ্ভাবনে উক্ত বেঞ্চের সকল কাগজাদি অনলাইনে প্রদানের অনলাইন প্লাটফর্ম প্রস্তুত করা হয়েছে।’
২০২৫ সালে পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বেঞ্চসমূহেও পেপার ফ্রি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রধান বিচারপতির রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে দেশের জেলা আদালতসমূহেও সম্পূর্ণ পেপার ফ্রি বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে প্রধান বিচারপতি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।